নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা জরুরী কেনো
আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানবো, আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা জরুরী কেনো। ক্ষুধা পেলে আমরা আহারে রত থাকি, কিন্তু অনেক সময় বিবেচনা করি না যে, খাদ্যটি আমাদের জন্য নিরাপদ কিনা বা পুষ্টিমান কেমন। অনেক সময় অনিরাপদ খাবার গ্রহণের কারণে রোগ ব্যাধি তৈরি করে।
তবে এই জাতীয় খাবার উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ এবং সরবরাহ যথেষ্ট কঠিনই বলা যায়। কারণ আমরা যে গতানুগতিক খাবার খাই, তার মূল্যমান এ জাতীয় খাবারের তুলনায় অনেক কম। যখন বিশেষ যত্নে খাবার তৈরি করা হবে, তখন তার উৎপাদন ব্যয় বাড়বে।
ভূমিকা
আমরা বেঁচে থাকার জন্য বা প্রাণ স্পন্দন চালু রাখার জন্য বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি। দ্বিতীয় ধাপটি হচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য আমরা খাদ্য গ্রহণ করে থাকি এই খাবার প্রকৃতিতে প্রস্তুত অবস্থায় পাওয়া যায় না। বিভিন্ন ধাপ অবলম্বন করার পরে ইহা তৈরি হয়। খাদ্য উৎপাদন এবং প্রস্তুতির বিভিন্ন পর্যায়ে খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকারের ভেজাল মিশ্রিত হতে পারে।
এই সমস্ত মিশ্রণ অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ী গনের দ্বারা হতে পারে অথবা কৃষক কুলের অসতর্কতার কারণেও হতে পারে। কারণটা যাই হোক না কেন তা আমাদের কাছে কাম্য নয়। আমাদের কাম্য হল খাদ্যটা যেন নিরাপদ হয় এবং পুষ্টিকর হয়। নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের জন্য আমাদেরকে প্রত্যেকটি ধাপে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
নিরাপদ খাদ্য
যে সকল খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না, সেগুলোকে আমরা সাধারণত নিরাপদ খাদ্য বলতে পারি। আমরা খাবার গ্রহণ করি প্রধানত দুইটি কারণে। প্রথমত আমরা ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য খাবার খাই, দ্বিতীয়তঃ সেই খাবারে বিদ্যমান পুষ্টিমান যাতে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
কিন্তু এমন অনেক ধরনের খাবার আছে যেগুলো খেলে আমাদের শারীরিক মানসিক বিকাশ লাভ তো ঘটেই না বরঞ্চ অনেক সময় শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি সৃষ্টি করে। এই জাতীয় খাবারগুলিকে আমরা অনিরাপদ খাবার বলতে পারি। একটি খাবার উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন এবং পরিবেশন- যে কোন পর্যায়ে অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।
আমাদেরকে তাই বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে আমাদের অনিচ্ছাকৃত সত্বেও কোন একটি খাবার অনিরাপদ না হয়। খাবার অনিরাপদ হওয়ার কারণগুলো বিশদভাবে আলোচনা করা হলো-
উৎপাদন পর্যায়
জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসায়নিক সার এবং অথবা অনঅনুমোদিত রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে উৎপাদিত খাবার বা খাদ্যশস্য অনেক সময় বিষাক্ত হয়। অনঅনুমোদিত কীটনাশক এর ব্যবহার এবং কীটনাশকের যথেচ্ছা ব্যবহার এই দুটোই অনিরাপদ খাদ্য তৈরি করে। বিশেষ করে শাকসবজির জমিতে আমাদের দেশের কৃষকেরা যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহার করে।
তা যদি আমরা ভালোভাবে না ধুয়ে রান্না করি, তাহলে সেটা আমাদের শরীরের জন্য যথেষ্ট ক্ষতির কারণ হতে পারে। এইসব ক্ষেত্রে এই শাক সবজিগুলিকে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হলে আমাদিগকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
উদ্ভিদজাত খাদ্যের মতো প্রাণীজ খাদ্যও উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনিরাপদ বা বিষাক্ত হতে পারে। যে সমস্ত গাভীকে অতিরিক্ত দুধ পাওয়ার আশায় কৃষকেরা কিছু বিষাক্ত জাতীয় খাবার এবং ইনজেকশন ব্যবহার করে সেই সমস্ত গাভীর দুধ খাওয়া সম্পূর্ণ অনিরাপদ। গাভী গরু থেকে অতিরিক্ত দুধ পাওয়ার আশায় কৃষকেরা সাধারণত হরমোন জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করে থাকে।
খামারের হাঁস মুরগিকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কিছু সংখ্যক অসাধু খামারিরা অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া তাদের থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে ডিম মাংস পাওয়ার জন্য অনেক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় যাহা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।
মাছ চাষের ক্ষেত্রেও অনেক অসাধু উৎপাদনকারী বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে থাকে। মাছ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজমান। তাছাড়া জীবন যাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে আমরা অধিকাংশ সময় কর্মব্যস্ততার ভিতর দিয়ে কাটাচ্ছি। ফলে আমাদেরকে অনেকাংশেই ফাস্টফুডের উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।
এই জাতীয় খাবার গুলি এবং বেকারির খাবার গুলিতে অনেক সময় হরমোন জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন অ্যাস্ট্রোজেন হরমোন ব্যবহার করা হয় বেকারিতে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সংরক্ষণ পর্যায়ে
আমরা দানা জাতীয় খাদ্যশস্য এবং ডাল জাতীয় ফসল সহ অন্যান্য ফসল গুলিকে গুদামে সংরক্ষণ করে থাকি। এই সমস্ত গুদামে অনেক সময় পোকামাকড়, ইঁদুর তেলাপোকা ইত্যাদির আক্রমণ হতে পারে। সেই জন্য এই গুদাম গুলিতে অনেক সময়ই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিক পদার্থগুলোর ভিতরে অধিকাংশই সরকার কর্তৃক অনুমোদিত।
আরো পড়ুন: সড়ক দুর্ঘটনা এবং তার কারণ ও প্রতিরোধ
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সরকারের অনঅনুমোদিত কীটনাশকও ব্যবহার করা হয়। আবার অনুমোদিত কীটনাশকও অনেক সময় মাত্রার অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে খাদ্যশস্য বিষাক্ত হয়। এই সমস্ত বিষাক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের ফলে আমাদের কিডনি, হার্ট, চোখ, লিভার ইত্যাদি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আস্তে আস্তে শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে যায়।
খাদ্য প্রস্তুত বা রান্নার প্রক্রিয়ায়
আমরা বাজার থেকে যে শাকসবজি ক্রয় করি তাহা দেখতে খুবই সুন্দর আকর্ষণীয় এবং টাটকা মনে হয়। প্রথমত উৎপাদন পর্যায়ে চাষী রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে। দ্বিতীয়তঃ ব্যবসায়ীরা তাহা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য তাদের নিজস্ব দোকানে কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের সম্ভাবনা থেকে যায়।
ফলে বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসা শাক-সবজি কাটার পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে। তারপরে রান্নার বিভিন্ন পর্যায়ে মাছ-মাংস শাক-সবজি যাতে অতিরিক্ত ভাজাভুনাতে পরিণত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার নিরাপদ খাদ্য নয়।
নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব
নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো
- সঠিক খাদ্য মান বজায় থাকে
- ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ মুক্ত থাকে
- খাদ্যের ছয়টি উপাদান সঠিকভাবে সরবরাহ করে
- শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পুষ্টিকর খাদ্য
পুষ্টিকর খাদ্য বলতে সেই সমস্ত খাদ্যকে বুঝায় যে খাবার গুলিতে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় সকল উপাদান সরবরাহ করে থাকে। পুষ্টিকর খাদ্যকে অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে অর্থাৎ বিষমুক্ত থাকতে হবে। কারণ একটি খাবারের ভিতরে যদি সকল প্রকার প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে তাকে কখনোই আমরা পুষ্টিকর খাবার বলবো না, যদি সেখানে কোন বিষাক্ততা থাকে।
পুষ্টিকর খাদ্যের গুরুত্ব
পুষ্টিকর খাদ্যের গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- শরীরের চাহিদা পূরণ করে
- শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
লেখক এর মন্তব্য
বেঁচে থাকার জন্য আমরা প্রতিদিন যে সকল খাবার গ্রহণ করি সেই সমস্ত খাবারের দিকে আমাদেরকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তাহা যেন নিরাপদ হয় এবং পুষ্টিকর হয়। তবেই আমরা একটি কর্মক্ষম জাতি তৈরি করতে সক্ষম হব। নিশ্চয়ই আমরা উপরের আলোচনা থেকে নিরাপদ খাবার ও পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে জানতে পারলাম।
তাবিনতান ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url